রেনেসাঁস:প্রাচ্যতে না হয়ে কেনো পাশ্চাত্যে হয়েছিল?

 ১.


রেনেসাঁস একদিনে সংঘঠিত হয়নি এবং রেনেসাঁস কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।সময়ের পরিক্রমায় ও ঐতিহাসিক ক্রমধারায় মধ্য দিয়ে রেনেসাঁস সংঘঠিত হয়।সামন্ততান্ত্রিক সমাজ থেকে বানিজ্যিক ধনতন্ত্রের সমাজের আর্থসামাজিক পটভূমিতে যে সাংস্কৃতিক জাগরণ,ইতিহাসে রেনেসাঁস নামে পরিচিত।যা আমরা সবাই পুনঃজাগরণ নামে জানি।এখন প্রশ্ন হলো,রেনেসাঁসকে পুনঃজাগরণ বলা হয় কেনো?রেনেসাঁস হওয়ার আগে কি বিজ্ঞানমনষ্ক দৃষ্টিভঙ্গি, ইহজাগতিকতা ও আধুনিক জীবনবোধের চিন্তাভাবনা ছিলো না?কিসের যোগসূত্রতার মাধ্যমে রেনেসাঁস মধ্যযুগে সংগঠিত হয়েছিল?

এ সব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের ২৫০০ বছর আগে গ্রিক দর্শনের প্রাক সোফিষ্ট যুগে ফিরে যেতে হবে।যখন থেকে মানুষের যথার্থ চিন্তা ও প্রশ্নের মধ্য দিয়ে জ্ঞান হালচাষের যাত্রা সূচিত হয়েছিল।জ্ঞানের হালচাষ গ্রীসের আইওনীয় সম্প্রদায়ের হাত ধরে সূচিত হয়।প্রশ্নার্থ জিজ্ঞাসার উৎস থেকেই তারা দর্শন শাস্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন। বুদ্ধির শানিত চিন্তা ভাবনা ও জ্ঞানের বিচিত্র সম্ভাবনাগুলোকে বিজ্ঞানমুখী করে তুলেছিল। সেসব দার্শনিকরা হলো- থেলিস,এনাক্সিমেনডার,এনাক্সিমিনিস, পীথাগোরাস।থেলিসই প্রথম বিজ্ঞান সম্মত মতামত দেন।তিনি বলেন,পানি সমস্ত দ্রব্যর মূল ও আদি কারন।পানি থেকে সবকিছু উৎপত্তি এবং পানিতে সবকিছু বিলীন হয়ে যায়।বস্তুত পানি সৃষ্টির মূল উপাদান।

এ-সময় থেকে মানুষ যুক্তিবাদী হতে শুরু করে।মস্তিষ্ক দ্বারা চালিত হতে শুরু করে।পুরনো বিশ্বাস ও সংস্কারকে জলাঞ্জলি দিয়ে মানুষ উত্তরণ ঘটায় স্বকীয় চিন্তার রাজ্য।নানা প্রতিকূল পরিবেশ,বিধি নিষেধ থাকার পরও আইওনীয় সম্প্রদায়ের দার্শনিকরা শিখিয়েছেন প্রশ্ন করার সাহসিকতা। ইউরোপের রেনেসাঁস প্রথম শর্ত এটিই।আজকের আধুনিক  জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রথম বীজ রোপিত হয় গ্রীসে।পীথাগোরাসের হাত ধরে গনিত-জ্যামিতি শাস্ত্র, লিউকিপাসের হাত ধরে পরমাণু দর্শন পরে পরমাণু দর্শণের বিস্তৃতি বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দাঁড় করান তারই শিষ্য ডিমোক্রিটাস। এভাবে গ্রীকদের হাত ধরে দর্শন শাস্ত্র সমৃদ্ধশালী হয়।পরবর্তীতে সক্রেটিস যুগে দর্শনের আরো একধাপ এগিয়ে দিয়ে ইতিহাসের নতুন মাত্রা সংযোজন করে।প্রত্যয় থেকে জ্ঞানের উদ্ভব হয়।তাই সক্রেটিসের নীতি ছিলো-নিজেকে জানো।

সক্রেটিস স্বাধীন চিন্তার মানুষ ছিলেন।গ্রিক দর্শনের বিচ্ছিন্ন ও বিশৃঙ্খলার সময়ে তার আভির্ভাব ঘটেছিল।সক্রেটিস দর্শন বা দর্শনের পদ্ধতি তৈরী করে যান নি।তার দর্শনের পদ্ধতি কথোপকথন ও আলোচনামূলক এথেন্সে হাট-বাজারে যেখানে সব লোক সমাগম হতো।আলাপ আলোচনা তিনি কখনো একচেটিয়া করে রাখেননি।শ্রোতা বর্গ তার সাথে আলোচনা করত,প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্ন মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পথ খুজে বের করার চেষ্টা করতেন।আলাপ আলোচনা পদ্ধতি প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে হতো।এভাবে তিনি এথেন্সের নগরবাসীদের চিন্তা ও মননশীলতার বিপ্লব এনে দেন।এতে শাসক রাজদ্রোহীতার অভিযোগ এনে বন্দী করে।কিন্তু সক্রেটিস অসত্যের কাছে মাথানত করেননি।মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মুক্তির জন্য সক্রেটিস হেমলক বিষপান করেছিলেন। আর এখানে রেনেসাঁসের দ্বিতীয় শর্তটি নিহিত।সেটা হলো চিন্তার স্বাধীনতা ও অসত্য কাছে মাথা নত না করা।আমরা দেখি, মধ্যযুগেও সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে  ব্রুনো ও গ্যালিলিও গ্যালিলি আত্মহুতি দেন।

সক্রেটিস পরবর্তী প্লেটো ও অ্যারিস্টটল দর্শনের নতুন শাখা সংযোজন করেন।প্লেটোর অ্যাকাডেমিয়া ও অ্যারিস্টটলের লাইসিয়াম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি বলা যায়।ইউরোপের রেনেসাঁসের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ভূমিকা ছিলো।রেনেসাঁসের তৃতীয় শর্ত বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনবোধের উদ্বোধনের জন্য শিক্ষা প্রসার ঘটানো।

২.

গ্রিক জাতিরা পার্বত্য উপদ্বীপের অঞ্চলের অধিবাসী হওয়াই প্রকৃতিগত ভাবে তারা কর্মঠ ও শক্তিশালী জাতি।দেশের ভৌগলিক পরিবেশ গ্রিকদের দক্ষ নাবিক হতে সহায়তা করেছে।ফলে গ্রিকরা এশিয়া মাইনরের অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।মিসর,সিসিলি দক্ষিণ ইটালি ভূখন্ডে উপনিবেশ গড়ে তোলায় গ্রীক জাতির অবাধ যাতায়াতের ফলে ঐ অঞ্চলের সামাজিক রীতিনীতি, রাজনৈতিক ও দর্শনশাস্ত্রের সম্যক জ্ঞান লাভ করে।এভাবেই গ্রীকদের হাত ধরে জ্ঞান বিজ্ঞানের চিন্তা ও চর্চা সম্প্রসারিত হতে থাকে।আজকের আধুনিক যে গনতন্ত্র সেটা গ্রীকরাই  আনেন।গ্রীসে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গনতন্ত্রের বিকাশ ঘটেছিল।হেলেনীয় সময়কালে গোষ্ঠীতন্ত্রের উদ্ভব হয়।গোষ্ঠীতন্ত্র থেকেই অভিজাততন্ত্রের রূপ লাভ করে।এই অভিজাততন্ত্র থেকে কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গনতন্ত্রের বিকাশ ঘটে।পেরিক্লিস সময়কালীন গ্রীসে গনতন্ত্রের পরিপূর্ণতা বিকাশ লাভ করে।তিনি মনে করতেন,প্রত্যেক নাগরিকের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা উচিত।একারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে মুক্ত আলোচনা ব্যবস্থা করতেন।যেখানে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেত।


 হেলেনীয় সভ্যতা পরবর্তী হেলেনস্টিক যুগের সূচনা ঘটে ম্যাডিসনের অধিপতি আলেকজান্ডারের হাত ধরে।গ্রীসের স্পার্টার নগররাষ্ট্র বাদে বাকি সব নগররাষ্ট্র তার অধীনস্থ হয়।এ সময়ে আলেকজান্ডার পারস্য আক্রমণ করে।পার্সীয়দের পরাজিত করে মিসর ও পারস দখল করেন।মিসরের ভূখন্ডে গ্রীকরা বসতি স্থাপন করে।কোন কোন উপনিবেশ ভারতের সীমানার হওয়ার কারনে  গ্রীকরা ভারতের শিল্পকলা দ্বারা প্রভাবিত হয়।গ্রীকরা গ্রীস থেকে নিয়ে আনেন দর্শন, কলা ও গনিত শাস্ত্র।স্থানীয় মিসর ও পারস্য অধিবাসীদের থেকে গ্রহন করা হয় পারস্য শাসনতন্ত্র কাঠামোকে।এভাবে জ্ঞানের বৈচিত্র্যতার সম্মিলন ঘটে।

এসময়ে আলেকজান্দ্রিয়া নগরী বিজ্ঞান চর্চার তীর্থকেন্দ্রে পরিনত হয়।বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র গুলোতে বিজ্ঞানীগণ গবেষণায় ব্যস্ত থাকতেন।প্রয়োজনীয় লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরীর সুব্যবস্থা ছিল।এ সময়কালীন বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা হলেন ইউক্লিড,হিপাকার্স,আর্কিমিউস,জেনো ও এপিকিউরাস।

৩.

রোমানদের হাতে হেলেনস্টিক সভ্যতার পতন ঘটে।হেলেনস্টিক সভ্যতার পতনের রোমানরা সেখানে বসতি স্থাপন করে।জ্ঞান, দর্শন ও বিজ্ঞানের সুকুমার চর্চার রোমানরা গ্রীক থেকে নিয়েছিল।এ সময় যুক্তি ও প্রথার সম্মিলনে রোমান আইনের সৃষ্টি হয়।আইন প্রনয়ণে রোমানরা বিচার ব্যবস্থা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

পঞ্চম শতকে জার্মান এবং হুনদের আক্রমনের ফলে রোমান সাম্রাজ্য পতন ঘটে।বর্বর জার্মান এবং হুনরা সেসময়ে বিদ্যালয় গুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।যার ফলে ইউরোপের বিদ্যাচর্চার দীর্ঘ ঐতিহ্য সংস্কৃতি ব্যহত ঘটে।রোমান সাম্রাজ্য পতনের পর ইউরোপের শিক্ষিত বলতে গির্জার পুরোহিতরা ছিলো।পুরোহিতদের হাতে জ্ঞানের আলোকবর্তিতা মশালটি বেঁচে ছিল।কিন্তু ক্রিস্টান ধর্মের প্রয়োজনে তারা জ্ঞানকে ব্যবহার করত। যার ফলে শিক্ষিত পাদ্রীরা সেসময়ে প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে নি।রোমান সাম্রাজ্য পতনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে মধ্যযুগের অন্ধকার  যুগ সূচিত হয়।জ্ঞান চর্চার গ্রিক-রোমান ধারাটির সঙ্গে ইউরোপের সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটে।এ সময়ে আবার কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় বিশ্বাস প্রবল হয়ে ওঠে।নগরের প্রশাসনিক ক্ষমতা পুরোহিতদের হাতে চলে যায়।চার্চশাসিত ভূমিনির্ভর শাসন গড়ে ওঠে।মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে যায়।

৪.

ইউরোপের জন্য যেটা অন্ধকার যুগ,আরবদের জন্য আলোকবিচ্ছুরণের যুগ।সপ্তম শতাব্দীতে মহানবী আরবদের একত্রিত করেন।এশিয়া,ইউরোপ ও আফ্রিকার এক বিশাল অংশ আরবদের দখলে আসে।দখলকৃত এলাকার সম্পদ অধিগ্রহণের ফলে আরবরা অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী হয়।আর যেকোন সমাজে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা জ্ঞান বিজ্ঞানের দ্বার খুলে দেয়।আলেকজান্দ্রিয়া ও অন্যান্য গ্রেকো-রোমান শহর আরবরা জয় করতে গিয়ে বহু গ্রিক-রোমান পান্ডুলিপি চোখে পড়ে।গ্রিক-রোমান ভাষা থেকে আরবরা সক্রেটিস,প্লেটো ও অ্যারিস্টটল পান্ডুলিপি অনুদিত করে।জ্ঞান চর্চা শুরু হয় আরব বিশ্বে।তাদের হাত ধরে গ্রীক-রোমান জ্ঞান চর্চার ধারাটি ঠিকে ছিলো।

ক্রুসেড (১০৯৫-১২৭২) যুদ্ধে জেরুজালেম ও কনস্ট্যানটিনোপল জয় করলে ইউরোপীয়রা আবার তাদের গ্রেকো -রোমান ধারাটির সাথে পরিচিত হয়ে উঠে।আরবি থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনুদিত করা হয় গ্রন্থগুলোকে।এভাবে জ্ঞান চর্চার ধারাটি জাগরিত হয় ইউরোপে।১২০০-১৪০০ তিন শতাব্দীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ঘটে।বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান চর্চার প্রেক্ষাপটে পঞ্চদশ শতকে শুরু হয় রেনেসাঁস বা পুনঃজাগরণ।

৫.

রেনেসাঁসের মূল প্রত্যয় মানুষকে মানুষ করে তোলা।রেনেসাঁসই ধর্মযাজকদের ঔদ্ধত্য থাবা থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের মুক্তি ঘটায়।রেনেসাঁসের পথ ধরে আসে রিফর্মেশন ও এনলাইটেনমেন্ট। রিফর্মেশনকে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ও বলা হয়ে থাকে।এ আন্দোলনের ফলে যাজক সংঘের একচেটিয়া প্রভাব কমে যায় ও প্রতিটি মানুষের বিবেকের স্বাধীনতা পথ খুলে দেয়।

পুরাতন নিয়মকে না মানার প্রবনতা ও প্রশ্ন করার সংস্কৃতি মধ্য দিয়ে মানুষ আধুনিক সমাজে পদার্পন করে।ইতালিতে রেনেসাঁস সংঘটিত পরবর্তী সময়ে জার্মানিতে রিফর্মেশন, ফ্রান্সে ফরাসি বিপ্লব,ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব,সোভিয়েত ইউনিয়নে রুশ বিপ্লব ও চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে।রেনেসাঁস শুধু ইউরোপের জন্য আশীর্বাদ ছিল না;সমগ্র পৃথিবী মানুষের জন্য কল্যান বয়ে এনেছিল।


৬.

প্রাচ্যতে কেন রেনেসাঁস হয় নি-


জ্ঞান চর্চার ধারাটি প্রাচ্যতেও পরিলক্ষমান।সিন্ধু সভ্যতায় বিজ্ঞানের উন্নতি সম্পর্কে খুব বেশি প্রমান পাওয়া না গেলেও অঙ্কশাস্ত্র, ধাতুবিদ্যাতে পারদর্শী প্রমাণ পাওয়া যায়।হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে ওজনের জন্য বাটখারা ব্যবহার, নগর পরিকল্পনা ও দালানকোঠা নির্মানে তাদের জ্যামিতি সম্পর্কে জ্ঞান প্রমান করে।

সিন্ধু সভ্যতা পতনের পর আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে।আর্যরা ভারতে আসার সময় ধর্মগ্রন্থ বেদ নিয়ে আনে।বেদের মধ্য দিয়ে তাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়।ধর্মীয়,রূপকথা ও লোকিক কাহিনি বিদ্যামান ছিল বেদের মধ্যে।যার কারণে তারা কোন সুস্ঠু দার্শনিক চিন্তার দিকে অগ্রসর হতে পারেনি।আর্যরা বর্ণভেদ করে।মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষার সুযোগ আর্যরা রাখেনি।ভাববাদ ও পরজগত নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ বেশি মত্ত ছিলো।যার ফলে জগতকে জানার ইচ্ছা পোষন করেনি।আর্যদের দার্শনিক চিন্তা উপনিষদে পাওয়া যায়।এ সময় যাগযজ্ঞ ও আচার অনুষ্ঠান বেশি প্রাধান্য পায়। এ যুগে মানুষরা  পরজীবনে স্বর্গ লাভ করার জন্য বলি ও নির্জন বনে শারিরীক কষ্ট স্বীকার করে ধ্যান সাধনা করত।

মৃত্যুর পর আরেক জগত রয়েছে।যারা ইহজন্মে ধর্মের অবিশ্বাসী বা পাপী পরজন্মে তারা নরকে যাবে।যারা ধার্মিক তারা স্বর্গে যাবে।এভাবে জন্মান্তরবাদটি আসে।কাঠামোগত বাইরে গিয়ে চিন্তা করার স্বাধীনতা প্রাচ্য মানুষরা অর্জন করতে পারেনি।প্রশ্ন করার সাহজ তাদের মধ্যে ছিল না।যার কারণে এ অঞ্চলের মানুষের মনের মধ্যে বৈপ্লবিক চিন্তা সাধিত হয় নি।

৭.

বৈদিক ধর্ম মধ্য দিয়ে ভারতের সমাজ জীবনে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ষষ্ঠ শতকে বুদ্ধের আর্ভিভাব ঘটে।যা বৌদ্ধ ধর্ম নামে পরিচিত।বৌদ্ধ ধর্ম প্রাচ্যে এক নতুন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছিল।বুদ্ধ বর্ণ বিভক্ত সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।এবং সাম্যবাদী সমাজ গঠনে মানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি প্রথম বুদ্ধ দিয়েছিল।বুদ্ধ মানুষের দুরাবস্থার চিত্র এঁকেছেন।বুদ্ধের মতে, মানুষের দুঃখবোধের প্রধান কারণ অজ্ঞানতা।তাই বুদ্ধ জ্ঞানচর্চাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন।বুদ্ধের সময়কালীন মেয়েদের বিদ্যা শিক্ষার সুযোগ ঘটে।বুদ্ধ কখনো অলৌকিকতাকে প্রশ্রয় দেননি।তিনি মনে করেতেন,মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক।

।বুদ্ধ একজন বস্তুবাদী দার্শনিক ছিলেন।বুদ্ধ সর্বপ্রথম ঘোষনা করেন,সবকিছু পরিবর্তনশীল ও ধ্বংসশীল। বুদ্ধের মতে,কোন ঘটনা স্বয়ংক্রিয় নয়,প্রতিটি বস্তু ও ঘটনার কার্যকারণ শৃঙ্খলাবদ্ধ।বৌদ্ধ দর্শনে এ মতবাদকে প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি বলা হয়।বুদ্ধ আত্মাকে অস্বীকার করেন।তিনি আত্মাকে চেতনার প্রবাহ হিসেবে স্বীকার করেন।সে সময়ে বৌদ্ধ দর্শন জ্ঞান চর্চা ও চিন্তার জগতে এক সম্ভাবনা দ্বার খুলে দিয়েছিল।

বুদ্ধের মৃত্যুর পর বৌদ্ধ ধর্ম বস্তুবাদ থেকে বিচ্যুতি ঘটে ভাববাদে রূপান্তরিত হয়।সে সময়ে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি মতবাদে বিভক্ত হয়।১.হীনযান ২.মহাযান

মহাযানীরা বুদ্ধের উপর দেবত্ব আরোপ করে।ক্রমে ক্রমে মহাযানীর সংখ্যা বেড়ে যায়।বুদ্ধের মূর্তি বানিয়ে পূজা করতে শুরু করে।এভাবে বৌদ্ধ দর্শন তার মূল জায়গা থেকে ছিটকে পড়ে।প্রাচ্য  মানুষরা ভাববাদে নিমজ্জিত হয়।


গ্রন্থপঞ্জি-

১.বুদ্ধ দর্শন-নীরুকুমার চাকমা

২.বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস -শিশির ভট্টাচার্য 

৩.বিশ্বসভ্যতা-এ কে এম শহনাওয়াজ

৪.গ্রিকদর্শন প্রজ্ঞা  ও প্রসার-আবদুল হালিম

৫ প্রারম্ভিক সমাজবিজ্ঞান -রঙ্গলাল সেন।


সুদর্শন চাকমা
বাংলা বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

Comments

  1. পড়ে ভালো লাগলো। অনেক নতুন কিছু শিখলাম

    ReplyDelete

Post a Comment